যে কারণে বিশ্বকর্মার হাতে দাঁড়িপাল্লা থাকে!

বাঙালী হিন্দু গণ যে বিশ্বকর্মার মূর্তি পূজো করেন তিনি চতুর্ভুজা । এক হাতে দাঁড়িপাল্লা, অন্য হাতে হাতুরী, ছেনী ( লম্বা , ভারী লোহার যন্ত্র, মাথায় হাতুরী মেরে ফুটো করার কাজে ব্যবহার হয় ) , কুঠার থাকে । অবশ্যই এগুলি শিল্পের প্রয়োজনীয় জিনিষ, তাই শিল্প দেবতা বিশ্বকর্মা এগুলি ধারন করে থাকেন ।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান মতে প্রজাপতি ব্রহ্মার নাভিদেশ থেকে বিশ্বকর্মার উৎপত্তি হয়েছিল। তেমনি এক মতে বিশ্বকর্মা ও তাঁর স্ত্রী ঘৃতাচী দুজনেই শাপ পেয়ে এই পৃথিবীতে জন্ম নেন আমরা এই বাস্তুশিল্পীর যে রূপ দেখতে পাই তা হল তিনি হলেন চতুর্ভুজা। তিনি গজারুঢ় অর্থাৎ হাতি তার বাহন।

দাঁড়িপাল্লার একটি কারন আছে । আমরা যদি দাঁড়িপাল্লা কে ভালো মতো লক্ষ্য করি- দেখি সুপাশে সমান ওজনের পাল্লা থাকে। ওপরের মাথার সূচক যখন সমান ভাবে ঊর্ধ্ব মুখী হয়- তখন বুঝি মাপ সমান হয়েছে । এভাবে একটি পাল্লায় বাটখারা রেখে অপর টিতে দ্রব্য রেখে পরিমাপ হয় । তাত্ত্বিক ভাবে আমরা নিম্নোক্ত ভাবে বিশ্লেষণ করতে পারি –

আমাদের জীবনের কাটাতি আত্মিক বিন্দুতে স্থির রাখতে হবে । দুই পাল্লার একদিকে থাকবে জ্ঞান আর অপরদিকে কর্ম। জ্ঞানের দিকে বেশী ঝুকে পড়লে কর্ম কে অবহেলা করা হবে- পরিণামে আসবে দুঃখ, অভাব। আর কাটাতি কর্মের দিকে বেশী ঝুকে পড়লে তবে আসবে আধ্যাত্মিক অকল্যাণ ।

দাঁড়িপাল্লার মাধ্যমে আমাদের তিনি বোঝাতে চেয়েছেন এই পাল্লার দুই দিকে দুই রকম জিনিস দিয়ে জীবনে স্থিরতা বা ভারসাম্য আনা সম্ভব। আর সেগুলি হল কর্ম বা আপনার কাজ এবং অন্যটি হল কাজের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান। অর্থাৎ কাজ করেই গেলাম জ্ঞানার্জন করলাম না তাতে জীবনে ভারসাম্য আসবে না।

কাজ কম করলে জ্ঞান ভারী হয়ে পড়বে, তেমনি জ্ঞান কম হলে কাজ ভারী হয়ে পড়বে। তাই কাটাতি দুয়ের মাঝে সমন্বয় করে রাখতে হবে । কোন দিকেই না যেনো বেশী ঝুকে পড়ে। তাই তিনি এমন একজন দেবতা যিনি এই কাজ এবং জ্ঞানের মধ্যে ভারসাম্য আনতে পেরেছেন। তাই তার বাহন রূপে আমরা দাঁড়িপাল্লা দেখতে পাই।

এই নিয়ম না মেনে চললে বিশ্বপ্রেম , বিশ্ব ভাতৃত্ব সচেতনতা কোন টাই সম্ভব না।

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.