শ্রী শ্রী অনুকূলচন্দ্র ঠাকুরের আবির্ভাব দিবস ২০২৩ তারিখ সময় ও দিনক্ষণ। চলুন জেনে নেই!

ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসারে, অনুকুলচন্দ্র ১৮৮৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গ প্রদেশের পাবনা জেলার হিমায়তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে,
শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের শুভ আবির্ভাব দিবস (৩০ ভাদ্র ১২৯৫ বাং শুক্রবার, বাংলাদেশ ২ আশ্বিন, ইংরেজি ১৭ সেপ্টেম্বর, হিঃ ১ রবিঃ আউঃ।
((অমৃতযোগ- দিবা ঘ ৬ টা ৪৩ মিনিট গতে ১০ টা মধ্যে। রাত্রি ঘ ৭ টা ৪৬ মিনিট গতে ৯ টা ২০ মিনিটের মধ্যে।

মাহেন্দ্রযোগ- দিবা ঘ ৬ টা ৪৩ মিনিট মধ্যে ও ১ টা ১৭ মিনিট গতে ২ টা ৭ মিনিট মধ্যে। রাত্রি ঘ ৭ টা গতে ৭ টা ৪৬ মিনিট মধ্যে ও ১২ টা ২৭ মিনিট গতে ৩ টা ৩৪ মিনিট মধ্যে।))

তাঁর পিতা হলেন শিবচন্দ্র চক্রবর্তী এবং মাতা হলেন মনমোহিনী দেবী। ১৮৯৩ সালে তিনি হিমায়তপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করেন। ১৮৯৮ সালে তিনি পাবনা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং সেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তিনি অমিতাবাদের রায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অল্প সময়ের জন্য পড়েন এবং তারপরে পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনার নৈহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। পরে তিনি কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান হোমিওপ্যাথিতে ডিগ্রি অর্জন করে। অনুকূলচন্দ্র দেওঘরে তপোবন বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, পাবলিশিং হাউজ, ছাপাখানা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

সৎসঙ্গ স্থাপনঃ
সৎসঙ্গের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটির নামের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘সৎ ও সংযুক্তির সহিত তদগতিসম্পন্ন যাঁরা তাঁরাই সৎসঙ্গী, আর তাদের মিলনক্ষেত্র হল সৎসঙ্গ। শুরু হল মানুষ তৈরির আবাদ। কাজের মাধ্যমে যোগ্যতর মানুষ গড়ে তোলাই হলো তার প্রধান লক্ষ্য। সৎসঙ্গ “ইষ্টভৃতি” এর মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে, এক বিরল প্রথা।

সৎসঙ্গ আশ্রমঃ
ধর্ম কর্মের অপূর্ব সংযোগে সৎসঙ্গ আশ্রম। শিক্ষা, কৃষি, শিল্প সুবিবাহ আস্তিকের এই চার স্তম্ভের অভিব্যক্তি। এই আশ্রমে বিভিন্নমুখী কর্ম প্রতিষ্ঠানের বিদ্যায়তন গড়ে উঠল, প্রাচীন ঋষিদের তপোবনের নবতর সংস্করণ যেন। ব্রহ্মচর্য্য, গার্হস্থ্যয়, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস সনাতন আর্য জীবনের এই চারটি স্তরই সৎসঙ্গ আশ্রমভূমিতে এক সংগতিপূর্ণ যুগোপযোগী রূপ লাভ করে।

 

শ্রী শ্রী অনুকুল ঠাকুরের ক্রিয়াকলাপঃ
অনুকূলচন্দ্রের পিতা শিবচন্দ্র ছিলেন নিষ্ঠাবান ব্রাক্ষ্মণ। তার মাতা মনোমোহিনী দেবী ছিলেন একজন স্বতীসাধ্বী নারী। তিনি উত্তর ভারতের যোগীপুরুষ শ্রী শ্রী হুজুর মহারাজের শিষ্য। ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র মায়ের কাছেই দীক্ষা গ্রহন করেন।
পদ্মানদীর তীরে হিমাইতপুর গ্রামেই অনুকূলচন্দ্রের শৈশব, বাল্য ও কৈশরের সময় কাটান। পিতা-মাতার প্রতি ছিল তার পরম শ্রদ্ধা। একবার পিতার অসুস্থতার সময় সংসারে খুব টাকার সংকট দেখা দেয়। ওই সময় বালক অনুকূলচন্দ্র সংসারের হাল ধরেন। তিনি প্রতিদিন আড়াইমাইল হেটে হেটে শহরে মুড়ি বিক্রয় করে সে টাকা দিয়ে বাবার জন্য ওষুধ পথ্য ক্রয় করতেন।

তার মায়ের প্রতিও ছিল অনেক ভক্তি। মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে সকল দুঃখ তিনি সহজে সইয়ে নিতে পারতেন। হিমাইতপুরে বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে তিনি পাবনা ইনস্টিটিউটে এ ভর্তি হোন। বন্ধুদের কাছে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ছিলেন অত্যন্ত ভালোবাসার মানুষ।

কেউ তাকে বলতেন ‘প্রভু’ আবার কেউ বলতেন অনুকূল আমাদের রাজা। পাবনা থেকে নৈহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে এলেন অনুকূলচন্দ্র। এখান থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি মনোনীত হোন। কিন্তু সে পরীক্ষা তিনি দিতে পারেননি। এক গরিব বন্ধুর পরীক্ষার ফিসের টাকা যোগাড় করতে পারেনি দেখে কষ্ট পেয়ে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র নিজের অর্থটা তাকে দিয়ে দেন। মায়ের সখ বা ইচ্ছা পূরনের জন্য এরপর তিনি কলকাতার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হোন। পিতা অসুস্থ হওয়ায় সংসারে দারিদ্রতা দেখা দেয়।

সেজন্য কলকাতায় শিক্ষা জীবনটা ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জীবনের সংগ্রামের সময়। অর্থের অভাবে ঠিকমতো খাবার পর্যন্ত পেত না। কখনও রাস্তার পাশে টেপ থেকে পানি পান করে কাটিয়ে দিতো। অর্থনৈতিক কষ্ট থাকলেও অনুকূলের ছিল মধুর অমায়িক ব্যবহার। তার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে প্রতিবেশী ডাক্তার হেমন্তকুমার চাটুজ্জে ঔষধসহ একটি ডাক্তারী বাক্স তাকে গিফট দেন।
অনুকূলচন্দ্র ঐ ঔষধ দিয়েই শুরু করেন কুলিমজুরদের চিকিৎসা। সেবার করার সাথে সাথে যে সামান্য কিছু টাকা উপার্জন হতো তাতেই ধীরে ধীরে তার টাকার কষ্টের দিন শেষ হয়। কলকাতা থাকা অবস্থায় অনুকুলচন্দ্র মাঝে মাঝে গঙ্গার ধারে বসে ধ্যান করতেন। হিমাইতপুতে চিকিৎসক হিসাবে তাঁর কর্মস্থল শুরু হয়। এতে তিনি অভাবনীয় সফলতা পান। তবে তিনি শুধু শরীরের চিকিৎসাই করেন না, মনের চিকিৎসাও করেন।

তিনি অনুভব করলেন যে, মানুষের দুঃখের স্থায়ী সমাধান করতে হলে শারীরিক মানসিক ও আত্মিক এই তিন রকম রোগেরই চিকিৎসার প্রয়োজন। তিনি মানসিক রোগের চিকিৎসা শুরু করলেন। অসহায় গরিব যারা অবহেলিত অনুকূল তাদের হলেন কাছের বন্ধু। তাদের তিনি নামমাহাত্ম শুনিয়ে কীর্তনের দল গড়ে তুললেন। কিন্তু কিছু কিছু শিক্ষিত তরুণও এই সময় তাঁর প্রতি আকর্ষিত হয়ে পড়েন। তাদের নিয়ে কীর্তন আনন্দে মেতে উঠলেন অনুকূলচন্দ্র। তখন থেকে জমায়েত হওয়া ব্যক্তিগণ তাহাকে ডাক্তার না বলে ঠাকুর রুপে সম্মোধন করতে শুরু করেন।
ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের এই মহিমার কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে লাগল। তবে কীর্তনের বিষয়টা নিয়ে ঠাকুর গভীরভাবে নিমজ্জিত হলেন। তিনি অনুভব করলেন, কীর্তন মানুষের মনকে এক রকম উপরের স্তরে নিয়ে যায়, কিন্তু সে অবস্থা অনেক্ষণ ধরে রাখতে পারে না। মনের স্থায়ী অগ্রগতি ঘটাতে হলে চাই সৎনাম স্মরণ ও মননের সহায়তায় ব্রক্ষ্মার অনুভূতি। আর তার জন্য দীক্ষা একান্ত অত্যাবশ্যক। শুরুহল সৎ নাম প্রচারের মহিম্মানিত অধ্যায়। তার ভক্ত ও অনুরাগীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে লাগল। সৎসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা ঠাকুর শ্রী অনুকূলচন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটির নামের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘সৎ ও সংযুক্তির সহিত যুক্ত যারা তারাই সৎসঙ্গী, আর তাদের সকলের মিলনক্ষেত্র হল সৎসঙ্গ।

শেষ জীবনঃ
ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের পারমার্থিক প্রেরণায় আকৃষ্ট হয়ে দলে দলে মানুষ এসে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, গুলজারীলাল নন্দা এই সৎসঙ্গের কার্যক্রম দর্শন করে অনেক প্রশংসা করেন। ইংরেজি ১৯৬৯ সনের ২৭ জানুয়ারী তারিখে ৮১ বছর বয়সে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত আশ্রম ভারতের বিহারে দেওঘরে ঠাকুর দেহ ত্যাগ করেন।

 

আরো আপডেট পেতে

Bangla Panjika 2023 Paji 1430 Download করুন

For Bangla Calendar, Bangla Panjika, Bengali Calendar, Horoscope download Bangla Panjika 2023 Paji 1430

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.